স্মার্টফোনের ক্যামেরায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আসছে।

পৃথিবীতে এখন সবথেকে বিক্রীত পণ্যের মধ্যে মোবাইল ফোন বা স্মার্টফোন অন্যতম। প্রতিদিন অসংখ্য স্মার্টফোন বিক্রি হচ্ছে। বর্তমান সময়ে শুধু যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য নয়, বরং স্মার্টফোনের রয়েছে বহুবিধ ব্যবহার। অনেকেই, বিশেষ করে তরুণ সমাজ, স্মার্টফোনকে এক ‘আদর্শ এবং ঝামেলাবিহীন’ ছবি তোলার মাধ্যম হিসেবে দেখছে।
স্মার্টফোনের ক্যামেরায় প্রতিনিয়ত যুগান্তকারী পরিবর্তন আসছে। বর্তমানে অনেকেই ছবি তোলার জন্য ডিজিটাল ক্যামেরার পরিবর্তে মোবাইল ফোনকেই বেছে নিচ্ছেন। কিন্তু আমাদের অনেকের মোবাইল ফোন ক্যামেরার খুঁটিনাটি নানা দিক সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব রয়েছে। এই সম্পর্কে সঠিক ধারণা আমাদের পছন্দমতো স্মার্টফোন কিনতে অনেকাংশে সাহায্য করতে পারে।


আলট্রাপিক্সেল (UltraPixel)

ক্যামেরার পিক্সেল হিসাবের ক্ষেত্রে আলট্রাপিক্সেল হচ্ছে প্রচলিত পিক্সেল থেকে অপেক্ষাকৃত বড় আকারের পিক্সেলের ব্যবহার যা মূলত কম আলোতে ছবি তোলার ক্ষেত্রে এক রাতারাতি পরিবর্তন সাধন করেছে। মোবাইল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এইচটিসি প্রথমে তাদের ‘এইচটিসি ওয়ান’ ফোনের ক্যামেরায় এই প্রযুক্তি ব্যবহার করেছিল। এইচটিসি তাদের এই ফোনের ক্যামেরায় প্রচলিত মেগাপিক্সেল কমিয়ে আলট্রাপিক্সেল ব্যবহার করলে কম আলোতে ছবির ক্ষেত্রে এক দৃষ্টিনন্দন পরিবর্তন আসলেও দিনের প্রাকৃতিক আলোতে ছবির মানে মানের ক্ষেত্রে বেশ পিছিয়ে পড়ে। কিন্তু সময় অনেক এগিয়েছে। বর্তমানে মোটামুটি ভালো মানের স্মার্টফোনে এবং বিশেষ করে ফ্লাগশিপ স্মার্টফোনে মেগাপিক্সেল এবং আলট্রাপিক্সেলের হিসাবটি এমনভাবে সমন্বয় সাধন করা হয় যাতে করে ছবির পিক্সেল হিসাবে (Image Detail) কোনো পরিবর্তন না আসে এবং দিনের পাশাপাশি রাতের আলোতেও বেশ ভালো মানের ছবি পাওয়া যায়। বর্তমানে পৃথিবীর অধিকাংশ সেন্সর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান (সনি, স্যামসাং, অমনিভিশন ইত্যাদি) তাদের সেন্সরে আলট্রাপিক্সেল ব্যবহার করে থাকে। আলট্রাপিক্সেলের হিসাবটি মাইক্রনপিক্সেলে (µm) প্রকাশ করা হয়।
পিক্সেল সাইজ; Source: Android Authority

এইচডিআর (HDR)

সহজ কথায়, এইচডিআর বা High Dynamic Range হলো মোবাইল ফোনের সফটওয়্যারগত এমন একটি প্রযুক্তি যা ছবির পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ছবির জন্য সহায়ক না হলে একটি কৃত্রিম পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে ছবির জন্য কাংখিত পরিবেশ সৃষ্টিতে সাহায্য করে। বর্তমানে মোটামুটি মানের স্মার্টফোন থেকে শুরু করে ভালো মানের সব স্মার্টফোনেই এই এইচডিআর সুবিধা রয়েছে। ছবির বিষয়বস্তু এবং পরিবেশের মধ্যকার সম্পৃক্তি, উজ্জ্বলতা, প্রতিতুলনা ইত্যাদি বিষয় তুলনা করে ক্যামেরার এই ফিচারটি কাজ করে থাকে। এইচডিআর চালু করে অপেক্ষাকৃত কম অথবা বেশি আলোতেও কাঙ্ক্ষিত ছবি পাওয়া সম্ভব। উল্লেখ্য, এইচডিআর মোড চালু করলে সাধারণত ফ্ল্যাশ লাইট কাজ করে না।
এইচডিআর মোডের বিভিন্ন ব্যবহার; Source: Farbspiel-Photo

মেগাপিক্সেল (MegaPixel)

আমাদের মনে একটি ভ্রান্ত ধারণা সব সময়েই কাজ করে যে, যে ফোন ক্যামেরার মেগাপিক্সেল যত বেশি সেই ফোনের ছবি তত বেশি ভালো। বর্তমান সময়ে বিষয়টি কিন্তু তেমন নয়। একটি কম মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা দিয়েও কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশি মেগাপিক্সেলের তুলনায় সুন্দর এবং ঝকঝকে ছবি পাওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন যে মেগাপিক্সেল হলো ছবির আকার-আয়তনের একটি হিসাবমাত্র (Pixel Count)।
মেগাপিক্সেলের হিসাব; Source: Visualwilderness
যে ফোন ক্যামেরার মেগাপিক্সেল যত বেশি হবে, তোলা ছবির আকার তত বড় হবে। সুন্দর, আকর্ষণীয় এবং দৃষ্টিনন্দন ছবির ব্যাপারটি মূলত ক্যামেরায় ব্যবহৃত সেন্সরের মান, অ্যাপাচার, সঠিক ফোকাস, আলট্রাপিক্সেল থাকা-না থাকা এসব বিষয়ের উপরেই নির্ভর করে। অ্যান্ড্রয়েড অথোরিটি ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে
ক্যামেরার মেগাপিক্সেলের কাজটি কি? এর উত্তর হচ্ছে- ‘ছবির বিস্তার’।

ক্যামেরা অ্যাপ্লিকেশন

ছবির গুণাগুণের ক্ষেত্রে একটি স্মার্টফোনের ক্যামেরা অ্যাপ্লিকেশনের যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। নামকরা এবং প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির ফোন ক্যামেরায় সাধারণত ডিজিটাল ইমেজ স্টাবিলাইজেশন সুবিধাটি দেয়া থাকে। এছাড়া, ক্যামেরা অ্যাপ্লিকেশনটিই মূলত ছবির বিষয়বস্তু এবং ক্যামেরা মধ্যবর্তী দূরত্বের বিষয়টি হিসাবের মাধ্যমে Field of View তৈরি করে থাকে। ফোন ক্যামেরার অটো মোড এবং বিশেষায়িত কোনো মোডে তোলা ছবির মধ্যকার পার্থক্যের জন্য ক্যামেরা অ্যাপ্লিকেশনই কাজ করে। এই ধরনের পরিবর্তনের জন্য ক্যামেরা অ্যাপ্লিকেশনটিতে বিভিন্ন ধরনের টোয়েকিং (tweaking) করা হয়। উদাহরনস্বরূপ- গুগল, স্যামসাং, শাওমি ক্যামেরা অ্যাপ্লিকেশনের কথা বলা যেতে পারে।
ক্যামেরা অ্যাপ্লিকেশন ছবির ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে; Source: Android Authority
ফিচার ইমেজ- stuff.tv

No comments

Powered by Blogger.